আত্ননির্ভরশীল হতে হলে আমরা মনে করি স্বার্থপর হতে হবে। সহজ করে বললে, আগে নিজে ধনী হতে হবে পরে পরিবারকে সাহায্য করতে হবে। কিন্তু এমনটা করতে গেলেই আবার নিজেকে স্বার্থপর মনে হবে। ইসলামিক জীবন যাপনের জন্য আমাদের কি করা উচিত?
আল কোরআনে সেল্ফহেল্প নিয়ে সুন্দর একটা আয়াত আছে। আমি মনে করি, সেল্ফহেল্প এর সব থেকে সুন্দর সঙ্গা আল কোরআনে আল্লাহ দিয়ে রেখেছেন। “তুমি নিজে বাঁচো এবং তোমার পরিবারকে বাঁচাও।” এটার যদি আমরা আধ্যাতিক ব্যাখা খুজি তবে সেটা হচ্ছে, দোযখের আগুন থেকে প্রথমে নিজে বাঁচো সাথে সাথে তোমার পরিবারকে বাঁচাও।
আর যদি এটার জাগতিক ব্যাখা খুজি তবে সেটা হচ্ছে, আগে নিজেকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা, পরে যেন আরেকজনকে উদ্ধার করতে পারি। তাই প্রথম দৃষ্টি নিজের দিকে দিতে হবে। কিন্তু তার মানে এই না যে, নিজে সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত হয়ে পরে অন্যজনকে সাহায্য করা। বরং অন্যদের সাথে নিয়েই চলতে হবে। প্রথম পা নিজে দিয়ে দেখলেন সামনের মাটিতে নিজের পরিবারকে নিয়ে যাওয়া নিরাপদ কি না। সেখানে গিয়েই আপনার উচিত আপনার পরিবারের দিকে নজর দেয়া। কারণ তাদের সাথে নিয়েই যেতে হবে।
প্রথম সেল্ফহেল্প হচ্ছে, নিজেকে বাঁচানো। কিন্তু নিজেকে শুধু বাচালে হবে না। এটা স্বার্থপরতা। নিজেকে বাচানোর সাথে সাথে নিজের পরিবারকে বাচাতে হবে। আমরা এখানে বড় ভুল করি। আগে আমরা বড় লোক হতে চাই পরে পরিবারকে সাহায্য করতে চাই। উদাহরণ স্বরুপ, আগে চাকরী বা ব্যবসা করে বড় লোক হয়ে পরে পরিবারকে সাহায্য করা। কিন্তু নিজে বড়লোক হওয়ার পর পরিবারের আপনার আর প্রয়োজন নাও হতে পারে। তখন হয়ত আপনার কোন ভাই বা বোনের আপনার একটু সাহায্য পেলে পড়াশোনা শেষ করতে পারত। তাই নিজেকে পরিবারের সাথেই রাখতে হবে। আমাদের সামাজিক প্রচলন থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত।
আর এখনকার সময়ে সেল্ফহেল্প হচ্ছে নিজের স্কীল ডেভেলাপ করা। আমার কাছে এটাই বেস্ট প্রন্থা মনে হয়। নিজেকে বড় লোক করা কোন ধরনের আত্ননির্ভরশীলতা হতে পারে না। সম্পদ বাড়ার সাথে সাথে চাহিদাও বাড়বে। চাহিদা মানে শুধু বিলাসিতা নয়। সম্পদ বাড়ার সাথে সাথে দ্বায়িত্ত্বও বাড়বে।
আধুনিক সমাজে এটার অপব্যাখাও অনেক। একটা শ্রেণী আছে যারা মনে করে, সেল্ফহেল্প হচ্ছে শুধু আমি বাঁচব, আর কি হল না হল সেটা আমার দেখার বিষয় না। সেটা ভিন্ন আলোচনা। অবশ্যই সবার আগে নিজেকে সাহায্য করতে হবে। এটার মানে এই না যে, সবাইকে ফেলে যেতে হবে। বরং সবার আগে থেকে সবাই টেনে নিয়ে যেতে হবে। সফলতার দিকে। জান্নাতের দিকে। মুক্তির দিকে।
আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করতে হয় স্কীল ডেভেলাপ করার মাধ্যমে। কিন্তু এটার সাথে সুক্ষ্ম একটা মতভেদ আছে আমার। প্রকৃতপক্ষে আমরা কেউই আত্মনির্ভরশীল নই। সেটা সম্ভব নয়। স্কীল ডেভেলাপ করার উদ্দেশ্য কখনোই আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত না। স্কীল বা যোগ্যতা ডেভেলপ করার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, নিজেকে প্রজ্ঞাবান করে গড়ে তুলা। যেন শয়তান ধোঁকা দিতে না পারে। বা কেউ ভুল বুঝিয়ে বিপথগামী করতে না পারে।
আত্মনির্ভরশীল শব্দটার সব থেকে বেশি প্রয়োগ করে ওয়েস্টার্ন কালচার। তারা সবাইকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কথা বলে। নারীরা এটাকে আরও বেশি আঁকড়ে ধরেছে। অথচ আল্লাহ আমাদের সমাজ ও গোত্রে বিভক্ত করে পাঠিয়েছেন। এবং আল্লাহ বলছেন, তোমরা সৎ কাজে পরষ্পরকে সাহায্য করবে। কারণ একজন মানুষ একাধারে উকিল, ডাক্তার, শিক্ষক তথা সর্ববিষয়ে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করতে পারবো না। যে কাজে যে এক্সপার্ট তার কাছে যেতে হবে এবং তখন এক্সপার্টরা কেবল ভাল কাজের উদ্দেশ্যে যারা আসবে তাদের সাহায্য করতে হবে।
আত্মনির্ভরশীলতার সব থেকে নিচুস্তরের ব্যাখা যেটা দেয়া হয় সেটা হচ্ছে নিজের পায়ে দাড়ানো। এটা যদি সেল্ফহেল্প হয় তবে বাবা তার সন্তানকে হাঁটতে শেখায় যেন সে নিজে একা হাঁটতে পারে। বাবার উদ্দেশ্য যদি থাকত সন্তান তার উপর নির্ভরশীল থাকবে তবে কোনদিন হাঁটতে শেখাতো না। সন্তান যেন নিজে হাঁটতে পারে, নিজের চাহিদার যোগান নিজে অর্জন করতে পারে। এটাই একটা পরিবারের প্রথম চাওয়া থাকে তার সন্তানের কাছে। আর এই উদ্দেশ্য নিয়ে স্কীল ডেভেলাপ করলে একজন মানুষ এমনীতেই আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে। যেমন ফল ও কাঠ পাওয়ার উদ্দেশ্যে আমরা গাছ লাগাই কিন্তু বোনাস হিসেবে অক্সিজেন ও ছায়া পাই। নিজেকে সাহায্য করতে হলে নিজের যোগ্যতা ডেভেলপ করতে হবে। তখন এমনি এমনি সবকিছু পায়ের কাছে এসে পড়ে থাকবে। তাই সেল্ফহেল্প এর উদ্দেশ্য আত্মনির্ভরশীলতা আর সেটা অর্জিত হয় স্কীল ডেভেলাপ করার মাধ্যমে।