আলহামদুলিল্লাহ, আজ ইসমে আজম অর্জন করার কৌশল বা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এই আমলটি করে দুনিয়াতে হাসিল হবে না, এমন কোন নেক বাসনাই নেই। মানুষ যা কল্পনা করতে পারবেন না, আল্লাহ তাই দিবে এই আমলটির মাধ্যমে। বান্ধা যা চাইবে, আল্লাহ তাই দিবেন।
এই ইসমে আজম অর্জন করতে হলে, সবার আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। এই জ্ঞান অর্জন করতে হলে অবশ্যই আপনি নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। বিশেষ ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়ার জন্য বিশেষ দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন রয়েছে। তাই আসুন প্রথমে শর্তগুলো জেনে নেই।
মনে রাখবেন, প্রতিটি বিশেষ দক্ষতা এপ্লাই করতে হলে ব্যবহারকারী দক্ষ হতে হয়। যেমন তীর চালাতে হলে ভাল তীরন্দাজ হতে হবে। গাড়ী চালাতে হলে, ভাল ড্রাইভার হতে হবে। আপনার কাছে ইসমে আজম থাকলেও সেটা ব্যবহার করার মতো যোগ্য করে নিজেকে তুলতে হবে। তা না হলে, বিশেষ ক্ষমতা থাকার পরও আপনি তা ব্যবহার করতে পারবেন না। তাছাড়া ভুল প্রয়োগে দুনিয়া ও আখেরাত হারাতেও পারেন শয়তানের মতো। তাই খুব সাবধানের সাথে আগে নিজেকে যোগ্য করতে হবে। ধারালো তরবারী দিয়ে যে কোন কিছুই কেটে ফেলা যায়। তরবারী যানে না, সে ব্যবহারকারীর হাত কাটছে না কি অন্য কিছু কাটছে। তাই ইসমে আজম অবশ্যই অর্জন করার জন্য ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে হবে।
ইসমে আজম – যেভাবে শুরু করবেন?
১। ধীর স্থির ভাবে নামাজ আদায় করবেন। কতটা ধীর? চার রাকাআত ফরয নামাজ পড়তে ১০-১৫ মিনিট লাগবে এতটা ধীরে। মনে রাখবেন, আল্লাহ স্থির ধীর মানুষকে পছন্দ করেন। অস্থিরতা হচ্ছে শয়তানের বৈশিষ্ট্য।
২। সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে। সময়ের নিয়ন্ত্রক হচ্ছেন আল্লাহ। তিনি চাইলে সময়কে আপনার জন্য স্থির করে দিতে পারেন। আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যখন চাইবেন তখন মৃত্যুর সময়কে আপনার সামনে নিয়ে আসতে সক্ষম। প্রতিটা মুহুর্ত যখন সৎ চিন্তা ও কাজে ব্যায় করবেন তখন আপনার জাগতিক কাজগুলোতে আপনি সময়ের বরকত পাবেন। জাগতিক সকল কাজে সময়কে হিসাব করে খরচ করবেন আর আল্লাহর ইবাদতের জন্য বেহিসাব সময় দিবেন। তাহলেই আপনার জীবনে সময়ের বরকত আসবে। হাজার বছরে মানুষ যা অর্জন করতে পারে না, আপনি আপনার ছোট্ট জীবনকে অমর করে রেখে দিতে পারবেন।
৩। সব সময় স্রষ্টা সচেতনতা নিজের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিটা মুহুর্ত আল্লাহকে স্বরণে রাখতে হবে। ১ সেকেন্ডের জন্য আপনার অন্তর থেকে আল্লাহর ধ্যান থেকে বিরত থাকা যাবে না। মন সব সময়ই কিছু না কিছু চিন্তা করে। মন কখনোই অলস বসে থাকে না। সে সব সময়ই চিন্তা করে। আপনি যদি সচেতনভাবে তাকে কোন চিন্তা না দেন, তবে সে পাগলা ঘোড়ার মত ছুটে বেড়ায়। তাই মনকে সচেতনভাবে আল্লাহ ও উত্তম চিন্তায় নিমগ্ন করে রাখতে হবে।
৪। ভয়, রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, লোভ, জুলুম, গীবত ইত্যাদি এমনকি নিজের ক্ষতি চিন্তাও থেকে নিজেকে হাজার মাইল দূরে রাখতে হবে। আপনি ইসমে আজম অর্জনের পথে, আপনার যাবতীয় দুষ ত্রুটিগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে মেরে ফেলে দিতে হবে।
৫। বাবা মায়ের সাথে এবং আত্মীয়ের সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সুসম্পর্ক রাখতে হবে। সব সময় সব বিষয়ে পরিমিত আচরণ করতে হবে। কাউকেই আল্লাহর উপরে ভালবাসা যাবে না। কোন সৃষ্টিকে ঘৃণাও করা যাবে না। সকল কাজই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে। খাবার, দাবার, যৌনাচারসহ সকল কাজে পরিমিত হতে হবে। এমনকি কাউকে শাস্তি দিতে হলেও সেটাও আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকতে হবে। নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছায় রূপান্তর করতে হবে।
৬। সব সময় পবিত্র থাকতে হবে। অপবিত্র হলে দ্রুত আবার পবিত্র হয়ে যেতে হবে। ফরয গোসলে দেরী করা যাবে না। শয়তান সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে। তাই পবিত্রতার দিকে সব সময় নজর রাখতে হবে।
৭। সচেতনভাবে আড্ডা ও হাসি কৌতুক পরিহার করতে হবে। হাসি তামাশা আপনার আত্মাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। সুস্থ বিনোদন বলতে আসলে কিছু নাই। রিলাক্স হতে হলে পরিবারের সাথে গল্প করবেন এবং ঘুরতে যাবেন। কিন্তু গান বাজনা এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। স্ট্যান্ডআপ কমেডি নিষিদ্ধ। আপনার অন্তর থেকে আল্লাহ সচেতনতা দূর হয়ে যাবে এবং অন্তর অন্য কোন আনন্দে মেতে উঠবে এমন সব কাজই নিষিদ্ধ।
ইসমে আজম – দৈনিক আমল
ক. ফজরের পর ৪০ দিন ২০০ বার পড়বেন সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদি, সুবহানাল্লাহিল আজীম, এবং ২০০ বার সূরা এখলাস। ৪০ দির পর থেকে ৪১ বার করে পড়তে থাকবেন। মূলত এটাই ইসমে আজম।
খ. ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়তে হবে। ভরপেট খাবার খাওয়া যাবে না।
গ. তাহাজ্জুদ পড়তে হবে নিয়মিত। প্রতিদিন সামান্য হলেও অন্যকে সাহায্য ও সহযোগীতা করতে হবে।
ঘ. প্রতিদিন ৭০ বার আস্তাগফিরুল্লাহ, ৭০ বার দরুদ শরীফ, ৭০ বার ইয়া হাইয়্যু, ইয়া কায়ীমূ নিজের সুবিধামত সময়ে পড়ে নিবেন।
ঙ. প্রতিদিন কিছু সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে দুহাত তুলে আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। এই সময়ে মনে মনে ভাবতে হবে, আল্লাহ আপনার সব থেকে নিকটে। তিনি আপনার কথা শুনছেন। তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট।
এগুলো হচ্ছে আপনার প্রস্তুতি। আপনি যখন এগুলো করবেন তখন আপনার বাস্তবতা বদলাতে শুরু করবে। ইসমে আজমও উপরের আমলের মধ্যে রয়েছে। আপনি এই ইসমে আজমকে অর্জন করছেন শুধু ধীরে ধীরে।
মনে রাখবেন, বড় কোন দক্ষতা মানুষ একদিনে অর্জন করে না। চেষ্টা করতে করতে একদিন মানুষ সফল হয়। তাই ইসমে আজমের এই আমল চলতে থাকবে।
আপনি কিভাবে বুঝবেন, আপনি ইসমে আজম অর্জনে সঠিক পথে রয়েছেন?
১। যে আকাশে সম্মানিত সে জমিনেও সম্মানিত। জমিনে আপনি সম্মান পেতে শুরু করবেন।
২। রাগ কমে যাবে। সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে দূরে সরে যাবেন।
৩। শরীরের মধ্যে এক অসামান্য শক্তির উপস্থিতি মাঝে মধ্যে অনুভব করবেন। এটা বেশি ক্ষন স্থায়ী করতে হলে নিজে আমলের পাশাপাশি সৎ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে।
৪। আপনার আসে পাশে যে দুর্দশাগ্রস্থ, অভাবগ্রস্ত, বিপদগ্রস্থ তাদের আর্তনাদ আপনি অনুভব করতে শুরু করবেন।
৫। যখন যে কাজটি করা উচিত, আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না, কিভাবে যেন সেই কাজটি আপনি করতে উৎসাহী হয়ে উঠবেন।
বি.দ্র. ইসমে আজম রয়েছে উপরের আমলে তবে এটি প্রয়োগে রয়েছে কিছু কৌশল। আপনি যখন নিজেকে ইসমে আজম অর্জনে প্রস্তুত করেছেন তখন আপনি বুঝতে হবে এটি কার উপর কতটুকু প্রয়োগ করতে হবে। যেমন কেউ একজন জুলুম করছে। আপনি তার উপর প্রয়োগ করবেন কি না সেটা বুঝ থাকতে হবে। এটা হতে পারে তার পাপের সর্বোচ্চ স্তরে পৌছার জন্য হচ্ছে। পাপ পূর্ণ হলেই তার উপর শাস্তি নেমে আসবে অথবা হেদায়েত আসবে। কিন্তু আপনি তাকে থামিয়ে দিয়ে আসলে কি পরিণতি তৈরি করতে চাচ্ছেন? আবার আপনার সামনে একজন জুলুমের স্বীকার হয়েছে। আপনি তাকে রাজা বানিয়ে দেবার চিন্তা করবেন না। শুধু জালিমকে হেদায়েত অথবা মজলুমের মুক্তি নিয়ে চিন্তা করবেন। কাউকে হালাক বা ধ্বংস করে ফেলার চিন্তা করবেন না। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ধ্বংসের চিন্তা করা যাবে তবে সেটা আল্লাহর ইচ্ছা ও সঠিক সময় কোনটি সেটা বুঝে তারপর সেটা করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার সব ইচ্ছাই পূর্ণ করা হবে। শুধু আল্লাহর ইচ্ছাকে গুরুত্ত্ব দিয়ে সঠিক সময়ের জন্য ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
আবার ধরেন, আপনি ১০০ কোটি টাকা অর্জন করতে চাইলেন। কিন্তু এই টাকা অর্জনের উদ্দেশ্য পরিষ্কার থাকতে হবে। ব্যাংকে টাকা জমিয়ে রাখতে চান? ফুটানী করতে চান? না কি কোন এথিমখানা তৈরি করতে চান? আপনি কোথায় এথিমখানা বানাতে চান? আপনার এলাকায় এটা কি তৈরি করা জরুরী। অর্থাৎ ভাল কাজের উদ্দেশ্য হলেও এটার প্রয়োজনীয়তা থাকতে হবে। তাই ইসমে আজম প্রয়োগের আগে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে এটা এপ্লাই করতে হবে।
আপনি এবার ইসমে আজম প্রয়োগে প্রস্তুত–
যখন ইসমে আজম প্রয়োগ করতে চান তখন নিয়ত ও উদ্দেশ্য ঠিক করার পর, উদ্দেশ্যের দিকে গভীর মনোযোগ দিতে হবে। কমপক্ষে ৫ মিনিট মনোযোগ দিতে হবে। তারপর আল কোরআন থেকে যা কিছু ভাল তেলাওয়াত করতে পারেন, ১০-২০ মিনিট তা তেলাওয়াত করতে হবে এবং ওই সময়ে উপলব্ধি করতে হবে আপনি আল্লাহর সব থেকে নিকটে অবস্থান করছেন। আপনার উদ্দেশ্যের দিকেও মনোযোগ ধরে রাখতে হবে। তারপর দাড়িয়ে ৭ বার বলবেন — “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদি, সুবহানাল্লাহিল আজীম”। তারপর “কুনননননননননননননন… ” উচ্চারণ করতে হবে। কুন একটু লম্বা করে টান দিয়ে এবং শেষের দিকে আওয়াজ একটু একটু করে কমিয়ে আনতে হবে। কুন হচ্ছে সেই শব্দ যা উচ্চারণ করেন প্রথমে আল্লাহ এবং মহাবিশ্বের সবকিছু সৃষ্টি হয়। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে আপনিও আল্লাহর হুকুমকে জগতে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
ইসমে আজম প্রথম প্রথম যখন প্রয়োগ করবেন তখন গভীর রাতে তা করতে হবে। আপনি যখন অভস্ত্য হয়ে উঠবেন তখন হাজার মানুষের ভিড়েও তা প্রয়োগ করতে পারবেন।
আপনাদের আগ্রহ থাকলে এই বিষয়ে আরও গভীর বা উচ্চতর দক্ষতা অর্জনের কৌশল নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
বি.দ্র. কেউ যদি এই জ্ঞান কোন খারাপ নিয়তে অর্জন করতে চায় তবে সেই দুনিয়াতে পাগল হয়ে যেতে পারে। এমনকি তার ইহকাল ও পরকাল শয়তানের মতোই অভিশপ্ত হয়ে যেতে পারে।
তাই আপনি ইসমে আজম অর্জন করবেন। কিন্তু এটা প্রয়োগ করতে যাবেন না, না বুঝে। আপনি যদি ইসমে আজম অর্জন করে এবং এটা প্রয়োগ নাও করেন তবুও এই ইসমে আজমের ফযিলতে আল্লাহ দুনিয়ার সবকিছুই আপনার সামনে এনে দিবেন। হয়ত কোনদিন এই ইসমে আজম প্রয়োগ করার প্রয়োজন নাও হতে পারে। তাই সবাই এটা অর্জন করুন কিন্তু না বুঝে এটা এপ্লাই করবেন না।
লেখক –
ওবায়দুল হক।
ফেইসবুক