শয়তান আমাদের কিভাবে ফাদে ফেলে ইমানহারা করে এটা জানতে প্রথমে আমরা আসুন জেনে নেই শয়তান কিভাবে আদম (আ) কে ফাদে ফেলেছিল। শয়তানের চক্রান্ত হয়েছে ভয়াবহ রকমের চক্রান্ত। আল্লাহ তা আলা বার বার আমাদের শয়তান সম্পর্কে সচেতন করেছেন। আমরা যেভাবে শয়তানকে শত্রু হিসাবে বিবেচনা করা উচিত আমরা সেভাবে করছি না। বিষয়টাকে আমরা যতটা গুরুত্ত্ব দেয়া উচিত সেভাবে গুরুত্ত্ব দিচ্ছি না। কিন্তু সবারই উচিত শয়তান সম্পর্কে সব সময় সজাগ থাকা। কখন কিভাবে আমাদের ফাদে ফেলে ঈমান নষ্ট করে ফেলবে তা আমরা ঠেরই পাব না।
আদম (আ) বেহেস্তে প্রবেশের পর শয়তান আদমের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। শয়তান একটি সাপের মুখে বসে নিষিদ্ধ গাছটির পাশে গিয়ে সুরে সুর তুলতে থাকতে। আদম (আ.) এই সুরটিতে মুহিত হোন এবং কি হচ্ছে এটা দেখার জন্য নিষিদ্ধ গাছটির নিকটবর্তী হোন। তখন আদম (আ) কে শয়তান সাপের মুখের ভেতর থেকে বলে, তুমি কি বন্ধু জানো ? এই গাছটির ফলটিতে কি রয়েছে? আদম (আ) জানতে চাইলে শয়তান বলে উঠে, এটা হচ্ছে এমন এক ফল যা খেলে তুমি আমার মতো অমর হয়ে যাবে। আমি তোমার শুভাকাঙ্খি বন্ধু তাই বলছি। এটা খেলে তুমি অমর হয়ে যাবে। আদম (আ) তখন ফলটি খেতে অস্বীকার করেন। তখন শয়তান প্রোরোচিত করে বলে, তুমি কি এমন ভয় পাচ্ছ? এটা আল্লাহ তা আলার সাধারণ একটি নির্দেশ তোমার প্রতি। এটা অমান্য করলে তেমন কিছুই হবে না। বরং তিনি চান না তুমি অমর হও আমার মতো। তাই তিনি তোমাকে এটা খেতে নিষেধ করেছেন। অতপর হাওয়া (আ) এর কৌতহলে তাঁরা ফলটি খান। অতপর তারা বস্ত্রহীন হয়ে পড়েন। আদম (আ) অনুতপ্ত হোন। আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনাটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শয়তান আমাদের বন্ধু রুপেই আমাদের সামনে আসে এবং সে বুঝাতে চায় সে যে বুদ্ধি দিচ্ছে এটা মূলত আমাদের ভালোর জন্যই এমন বুদ্ধি দিচ্ছে। ধীরে ধীরে শয়তান আল্লাহর হুকুমকে আমাদের কাছে খুব একটা গুরুত্ত্ব নয় এমনভাবে তুলে ধরে। অতপর আমাদের দিয়ে আল্লাহর অবাধ্য করে ঈমান নষ্ট করে ফেলে।
আমাদের কাছে শয়তান কিভাবে আসে? — আমাদের কাছেও শয়তান আসে এবং বুঝাতে চায়, সামান্য একটু গোনাহ না করলে গোনাহের ধরন বা উপলব্ধী আমরা বুঝতে পারব না। তাছাড়া আমরা তো তওবা করে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। এভাবে শয়তান একটু একটু করে গোনাহের দিকে আমাদের মনোযোগ নিয়ে যায়। আমরা ভাবি, একটু গোনাহ না করলে তো আর গোনাহমুক্তির অনুভূতি পাব না। তওবা করেই যখন মাফ পাওয়া যাবে তাই একবার ছোট্ট একটু গোনাহ করে দেখলে ক্ষতি কি। কাউকে তো আর মেরে ফেলছি না। ছোট্ট একটা গোনাহ করছি। সামান্য মদ খাচ্ছি কিংবা পর নারীর হাত একটু ধরে তার অনুভূতি কেমন সেটা দেখছি। আমি তো আর পরকিয়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি না। একটু ছুয়ে দেখি। আর কিছু করব না। আমার কন্ট্রোল এতো অল্প না কি। যখন চাইব তখনই ফিরে আসব। এভাবে শয়তান মন্দ কাজের দিকে একটু একটু করে নিয়ে যায় আর ঐ কাজটি করলে তেমন বড় কোন গোনাহ হবে না। সামান্য একটু গোনাহ যা তওবা করেই ফিরে আসা যাবে। এভাবেই শয়তান একটু একটু করে যখন পাপে জড়িয়ে ফেলে তখন আর আমাদের সামনে ফিরে আসার পথ থাকে না। আর থাকলেও সেটা কঠিন হয়ে পড়ে। কেউ কেউ পাপে আসক্ত হয়ে যায় , কেউ কেউ আজ কাল করে করে সময় অতিবাহিত করতে থাকে। কেউ কেউ ফিরে আসলেও বার বার পাপে জড়িয়ে যায়। আর তওবার রাস্তা তার থেকে হারিয়ে যায়।
শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শত্রু থেকেও ভয়ংকর। সে আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছে যে, সে এমনভাবে সামনে পেছনে ডানে বামে উপরে নিচে থেকে মানুষকে জড়িয়ে ধরবে যে, সে আল্লাহর অবাধ্য হবেই। আসলেই কিন্তু তাই। শয়তান এমনভাবে জড়িয়ে ধরে যে, আমরা বুঝার আগেই আমরা অবাধ্য হয়ে যাই।