আমাদের মনে এমন প্রশ্ন আসতেই পারে যে, আল্লাহ তো চাইলে সবই পারেন কিন্তু তিনি কাফেরদের কেন মুমিন বানিয়ে দিচ্ছেন না? কিংবা সবাই কেন মুসলিম ঘরে জন্ম নিচ্ছে না?
সবাই কেন মুসলিম হয়েই জন্ম নিচ্ছে না?
মূল কথা হচ্ছে সবাই মুসলিম ঘরে জন্ম নিলেই তারা ঈমানদার হবে এটা ঠিক নয়। নবীর স্ত্রী ও সন্তানরা পর্যন্ত ঈমান আনতে পারে নি। নূহ (আ) এর সন্তান তো তাঁর চোখের সামনেই পানিতে ডুবিয়ে মারা হল। অর্থাৎ মুসলিম ঘরে জন্ম নিলেই সবাই ঈমানদার হবে না।
তাছাড়া আমাদের সবারই পূর্ব পূরুষ কিন্তু একজন। তার মানে আমরা কিন্তু সকল ধর্মের মানুষই আদম (আ) এর সন্তান। তাহলে এক পিতার সন্তান হওয়ার পর এত ধর্ম কিভাবে সৃষ্টি হল? এক পিতার ঘরে জন্ম নিলেই ঈমানদার হবে না। এটা ভুল ধারনা।
আল্লাহ চাইলে কি সবাইকে ঈমানদার বানিয়ে দিতে পারতেন না?
অবশ্যই পারতেন। তিনি চাইলে সব কাফেরের ঘরে সন্তান জন্ম দেয়া বন্ধ করে দিতে পারতেন। সব মুসলিমের সন্তানকে ঈমানদার করে দিতে পারতেন। কিন্তু আল্লাহ এখানে কোন হস্তক্ষেপ করেন না। কারণ আল্লাহ তা আলার উদ্দেশ্যই ছিল এটা পরীক্ষা করে দেখা যে, মানুষ তার স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দিয়ে সে কোন পথ বেচে নেয়। আল্লাহ যদি সবাইকে তার হুকুম মানতে বাধ্যই করবেন তাহলে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যই রইল না। মানুষ তার নিজ স্বাধীন শক্তি দিয়ে কোন পথে পরিচালিত হয় এটাই পরীক্ষা করছেন আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করার মাধ্যমে।
আল্লাহ কেন সবাইকে ঈমানদার বানিয়ে দিয়ে সব কাফেরকে মেরে ফেলছেন না?
এই প্রশ্নও অনেকে করে থাকেন কিংবা অনেকের মনে এমন প্রশ্ন জাগে। আল্লাহ কিন্তু অনেকবার এমনটা করেছেন। সব কাফেরকে মেরে ফেলেছিলেন। নূহ (আ) অবাধ্য উম্মতকে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন, ফেরাউন সম্প্রদায়কে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন, আদ জাতী , সামূদ জাতী, লূত সম্প্রদায়সহ অসংখ্য বার আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে মেরে পৃথিবীকে পরিশুদ্ধ করেছেন। কিন্তু তারপর কি হল? জমিনে ঈমান কয়েম হয়ে গেছে? না তা হয় নি। বরং আবার মানুষ অবাধ্য হয়েছে। বার বার মানুষ অবাধ্য হয়েছে। আল্লাহ আপনার আমার ইচ্ছায় কাফের সম্প্রদায়কে নির্মূল করেন না। কাফের সম্প্রদায় যখন তার নবীকে মেরে ফেলার মতো চক্রান্ত করে কিংবা সরাসরি অবাধ্যতা ও বড় কোন ধরনের পাপ প্রকাশ্যে সবাই একত্রে করে কেবল তখন তিনি বড় ধরনের আসমানী গযব পাঠান। কিয়ামতের আগে আরও একবার পৃথিবী পরিশুদ্ধ হবে। কিন্তু এটা ঘটবে যখন সেটার প্রয়োজন হবে বা আল্লাহ তা আলা ভাল মনে করেন।
আল্লাহ কেন কেউ অবাধ্য হওয়ার সাথে সাথে তাকে পাকড়াও করেন না?
কাউকে অবাধ্য হওয়ার সুযোগ না দেয়া আর তাকে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দেয়া দুটি পরষ্পর বিরোধী কাজ। আল্লাহ তা আলা এই শক্তি দেয়ার কারণ হচ্ছে তিনি দেখতে চান, প্রকৃতই কারা আল্লাহর হুকুম মানে। আর এজন্য তিনি মহা পুরষ্কারের ব্যবস্থাও করে রেখেছেন। তার জন্যই আল্লাহ সাথে সাথে শাস্তি দেন না বরং বিচার দিবস পর্যন্ত তিনি সবাইকে সময় দিয়েছেন। আর যখন তিনি বিচার করবেন তখন আর কেউ তা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না।
তাহলে আমরা কি কাফের হত্যা করব?
একমাত্র যুদ্ধের ময়দান ছাড়া আর হত্যার প্রতিশোধ বা বদলা হিসাবে হত্যা করার বিধান ছাড়া আল্লাহ কাফেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেন নি। বরং তিনি চান কাফেররা একটা সময় পর্যন্ত তারা জমিনে বেচে থাকুক। এমনকি কাউকে জোর করে মুসলিম বানানোর চেষ্টা করতেও নিষেধ করেছেন। উপরের আয়াতটি দেখুন। যেখানে আল্লাহ জোর করছেন না, সেখানে আপনি কি জোর করবেন কাউকে ঈমান আনার বিষয়ে?
কয়েকদিন আগে একজন ইরাকি টিকটকারকে হত্যা করা হয়েছে। ধর্মের নামে যত হত্যা করা হচ্ছে এসবের কোনটাই ইসলাম দ্বারা স্বীকৃত নয়। বরং এগুলো হত্যা এবং যারা এসব করছে তারা ঐ ব্যক্তির সকল গোনাহের বোঝা বহন করবে।
এমনও তো হতে পারত, ঐ টিকটকারের ঘরে বড় কোন আলেমের জন্ম হতো? অনেক বড় বড় কাফেরের ঘরেও কিন্তু ঈমানদার সন্তানের জন্ম হয়েছে। নবী (স) এর জীবনী দেখলে এবং মক্কায় ইসলামের শুরু সময়টিতে আমরা দেখেছি, বড় বড় সব কাফেরের ঘরে এমন সব বড় বড় সাহাবীর জন্ম হয়েছে তারা পরবর্তীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় অনেক কাজ করেছেন। এসব কাফেরদের মেরে ফেললে এসব মুমিন বান্ধার জন্ম কিভাবে হতো? তাই আল্লাহই সব কিছু সঠিক পরিকল্পনায় সৃষ্টি করেছেন। তিনি উত্তম ও মহান।